সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১১

ঈশ্বরচিন্তা


আমরা ভাবতে গেলে প্রায়শই চিন্তাভাবনা এগোতে পারে না, এটা হয়ত পরিপক্বতার অভাব ,যেমন প্রাচীন মানুষরা আকাশের তারকা কে অলৌকিক শ্বাপদের চোখ ভাবত। এখানে যত মানুষ জেনেছে ততই ভ্রান্ত এবং অলৌকিকের ধারনা থেকে মুক্ত হয়েছে। এই মুক্ত হওয়াটা কোন সার্বজনীন বিষয় নয় অবশ্যই, এখনো হস্ত রেখায় বিশ্বাসী মানুষ তাবিজ কবজে বিশ্বাসী মানুষ রয়েছে অনেক। তবে এ মানব সভ্যতার আওতায় জ্ঞান বলতে সেই জ্ঞানটি কিছু মানুষের হাতে থাকলেই তাকে আমাদের আওতাধীন বলতে পারি। ১৯২০ এ বলা হত মাত্র তিনজন মানুষ জেনারেল রিলেটিভিটি বুঝে। সেভাবে সংজ্ঞায়িত করলে আমরা এগিয়েছি অনেকটুকুই,আমি প্রাচ্য পাশ্চাত্যের বিবাদে যাব না। মানুষ বলতে আমি আন্তর্জাতিক মানুষই বুঝচ্ছি। এখন আমাদের জীবনে যডি র‍্যাশনালিটিকে স্ট্যান্ডার্ড ধরি তাহলে বলা যাবে ইন্টেলেকচুয়াল দৃষ্টি থেকে অলৌকিকতা মোটামুটি এক্সটিঙ্কট একটা অধ্যায়। মেইনস্ট্রীম মানুষ রা ,যারা সভ্যতার অর্জন জ্ঞান সমূহ কিছুটা মাত্র আয়ত্ত করতে পেরেছে সে নিজের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকা পরিবেশে অলৌকিকতাকে পাত্তা দিবে না। সুতরাং অলৌকিকতার শেষ আশ্রয় এখন পুরাণে, সাহিত্যে আর ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞানে। আর সর্বোপরি রিলিজিয়াস স্ক্রিপচার গুলোতে।
তাহলে বিশ্বাসের ভিত্তি কোথায় প্রোথিত? কোথা থেকে আমাদের মাঝে আত্নপ্রেরনা আসে সরলরেখার আবশ্যিকভাবে একটি শুরু বিন্দুর কল্পনা ?(যদিও আধুনিক গণিত বিজ্ঞান আমাদের ইন্টুশন থেকে অনেক এগিয়ে ,কিন্তু অধিবিদ্যিক চিন্তাধারা এই ইন্টুশনকে ঘিরেই তৈরি। অইউক্লিডিয় জ্যামিতি আমাদের জানায় রেখার শুরু বিন্দুর কোন প্রয়োজন নেই, সেইসাথে সরলরেখাও আসন্নীকরন ছাড়া আর কিছুই নয় তখনো মেটা ফিজিক্সের ধারনা প্রণেতারা সেই ইন্টুশনের বাইরে যেতে পারেন না। আমরা এখনো একই এন্টিটির যুগপৎ ভিন্ন অবস্থানে থাকা স্বীকার করে উঠতে পারি নি, যদিও কোয়ান্টাম পরিমণ্ডলে তা প্রতিষ্ঠিত সত্য। )যে কারনে সকল মেটা-ফিজিক্যাল চিন্তাই ইন্টুশন থেকে আসা, একধরনের স্থূল সাধারণীকরণ যা প্রধানত বিশ্ব সম্পর্কে অবৈজ্ঞানিক চেতনাই প্রকাশ করে। এদের এক মাত্র ডিফেন্স মেকানিজম হচ্ছে বিজ্ঞানের অসম্পুর্নতা। বিজ্ঞান সম্পূর্ণ নয়,এবং নিয়ত পরিবর্তনশীল। সেকারণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে নতুন তত্ব। কিন্তু এই অসম্পূর্ণতা মেটা-ফিজিক্সের কোন বৈধতা হতে পারে না। এটা অনেকটা এরকম দৃষ্টিভঙ্গি যে “টার্বুলেন্স ফ্লুয়িডের ” কোন স্ট্যাবল তত্ব নেই সুতরাং টার্বুলেন্ট ফ্লুইড নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কোন চিন্তাতীত প্রক্রিয়া দ্বারা। এই দৃষ্টিভঙ্গি মানব সমাজের ইতিহাসে খুবি জনপ্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি সন্দেহ নেই,একসময় বজ্রপাত ,রোগবালাই ও এই ব্যাখ্যার আওতায় ছিল। কিন্তু দেখাই যাচ্ছে মেটা-ফিজিক্সের কারিশমা সঙ্কুচিত হতে হতে বর্তমানে না না বহুরূপে সার্ভাইব করার চেষ্টায় মরিয়া। প্রথমত মেটা-ফিজিক্স ঢুকে পড়েছে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীতে, কারণ বর্তমান যুগের অলৌকিকতা গ্রহণযোগ্য নয়। সেই সাথে বিজ্ঞানের অসম্পূর্ণ অংশ গুলোতে। মেটা-ফিজিক্সের কিছু রূপভেদ আছে যারা মেটা-ফিজিক্সকে সামাজিক এবং নৈতিক মুখোশে গ্রহণযোগ্যতার যুক্তি প্রদর্শন করে। কেউ কেউ মেটা-ফিজিক্স কে সামাজিকভাবে অসাড় ভাবায় একে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিবেক-জাত উদ্দীপনা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছে। প্রতিক্রিয়াশীলটা মেটা-ফিজিক্সের অনেক বড় বৈশিষ্ট্য কিন্তু এমন না যে মেটা-ফিজিক্স ধারণকারী এন্টিটি বা পোষক প্রতিক্রিয়াশীল। এই সহনশীলতা কিন্তু মেটা-ফিজিক্সের অবদান নয়। কাড়ন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা দেখেছি কিভাবে মানব সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সহনশীলতার স্কেল এক্সপনেনশিয়ালি ইংক্রিজিং গ্রাফের মত আচরণ করে।
এই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে ব্যক্তি স্বত্বা আমি। আমার চারপাশ কে ঘিরেই আমার অনুভূতি এবং বোধের বিবর্তন। আমি জানতে চাই বা বুঝতে চাই দেখেই চারপাশের গড়ে ওঠে নানা ডিসিপ্লিনের নানা জ্ঞান। এই বোধের উত্তর দিতেই আমরা যেটা (সকল ক্ষেত্রেই ব্যক্তি আমির ই সম্প্রসারণ)। কারণ সকল কিছুই এসেছে কোন না কোন ব্যক্তি জিজ্ঞাসা থেকেই। আমি সুখ পাই এই অইউক্লিডিয় বিস্তৃতি বক্র স্থানকে বৌদ্ধিক আরোহ পদ্ধতি দ্বারা বুঝতে। সুখ পাই ইয়েটস এলিয়ট সুধীন দত্তের কবিতায় জীবন বোধের ধারণাতীত কারুকার্যে। এ সুখ সত্য স্বীকারের সুখ। বস্তুগত মানুষকে জোর করে অবস্তুগত করারে চেষ্টা কোন বৌদ্ধিক আরোহ পদ্ধতিতে পরে না।
মানুষ কে মানুষ ভাবাই মানুষ কে সর্বোচ্চ সম্মানিত করা অতি-লৌকিক উচ্ছিষ্ট ভাবার চেয়ে। তাই নৈর্বত্তিক হতে চাই ,তীব্র ভাবেই নৈর্বত্তিক হতে চাই।

একটা ছোট গল্প দিয়ে শুরু করছি। মেরুদন্ডী প্রাণীর প্রাচীনতম পূর্বপুরুষ হচ্ছে সেলা। বেচারাদের অবশ্য পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করা বর্তমান কর্ডেট দের তুলনায় কিছুই ছিল। স্পাইনাল কর্ডের সামান্য ঊর্ধ্বাংশই ছিল তাদের সম্বল। ছোট, কয়েক সেন্টিমিটারের প্রাণীগুলো ছিল প্রচণ্ড বিপদে। তখন রাজত্ব চলছে বিশাল বিশাল আর্থোপোড প্রিডেটরের। সাত আট ফুট লম্বা এই সব কিলিং মেশিন সমুদ্র দাবড়িয়ে বেড়াত। সেলা লুকাত বালির নীচে।
এখন কি ভাবা সম্ভব? প্রাথমিক ভাবেই ভাবা যায় এই সেলা ব্যাটাদের কোন অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল যাতে তারা হতে পেরেছে সবচেয়ে শক্তিধর মেরুদণ্ডী দের পূর্বপুরুষ। আর আর্থোপোডেরা হতে পেরেছে তেলাপোকা। কিন্তু বাস্তবে তাদের কোন বিশেষ ছিল না সেই আর্থোপোডদের ডেজার্ট হওয়া ছাড়া। স্পাইনাল কর্ডের অর্জন একটি ব্যর্থ প্রাকৃতিক নির্বাচনের উদাহরণ হয়ে যাবারও যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল।
কিন্তু হটাতই শুরু হয়ে গেল বরফ যুগ। কততম বরফ যুগ আমার সঠিক মনে নেই। কিন্তু বরফ যুগের শুরুতে বিপুল সামুদ্রিক প্রাণী ডাঙ্গায় চলে আসল। ডাঙ্গায় দেখা গেল অন্য সমস্যা। যে প্রতিকূল গ্যাস এবং ম্যাগমা ভস্মের হাত থেকে বাচার জন্যে আর্থোপোডদের অর্জিত বহি:কংকাল অসম্ভব রকম এফিসিয়েন্সির প্রমাণ দিয়ে আসছিল, তুলনামুলকভাবে শান্ত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তারা যখন এক্সপোজ হয়ে গেল তখন সেটা একটা বাড়তি বোঝায় পরিণত হল। স্পাইনাল কর্ড অর্জনাকরী সেলার বংশধরেরা বাড়তে লাগল আকৃতিতে তাদের অন্ত:কংকাল কাঠামোর সুবিধায়। আর আর্থোপোডেরা তাদের বহি:কংকাল কাঠামোর জন্যে সীমাবদ্ধ বৃদ্ধির জন্যে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে শুঁড়-ওয়ালা তেলাপোকায় পরিণত হবার প্রস্তুতি নিল।
হয়ত আর কিছুদিন পর বরফযুগ শুরু হলে বুদ্ধিমান হিসেবে ইভলভ করত আর্থোপোডেরাই, আর ভাড়ার ঘরে মেয়ে আর্থোপোডেরা মানুষ দেখে চিৎকার চেঁচামেচি করত।
গল্পের মরাল হচ্ছে আকস্মিকতা। কোইনসিডেন্স।
মহাবিশ্ব অত্যন্ত জটিল একটি তন্ত্র। এখানে কোন সারবস্তু আউটপুট হিসেবে পেতে হলে কিছু আকস্মিকতার সাহায্য দরকার। আবার সেই আকস্মিকতা কোন দৈব-বলে হয় না। যেকোনো সিস্টেমের প্রোবাবিলিস্টিক ন্যচারের জন্যেই হয়।
মহাবিশ্বের প্রধান সূত্রগুলি তাই অত্যন্ত সার্বজনীন, যেখান থেকে পার্টিকুলার সলিউশান পেতে গেলে আক্ষরিক সমাধানের ভান ত্যাগ করতে হয়। আমরা এখনও অসংখ্য আসন্নীকরনের সাহায্য নিয়ে জেনারেল রিলেটিভিটির ফিল্ড ইকুয়েশন গুলি সমাধানের চেষ্টা করি।
তাই কোন তত্ব স্ট্যাটিক নয়, যেকোনো তত্ব নির্ভর করে তার ইনিশিয়াল পর্যবেক্ষণ, প্রাথমিক হাইপোথিসিসের উপর। তাই হাজার বার সঠিক প্রমাণিত হওয়া তত্ব হাজার একবারে অসাড় প্রমাণিত হতে পারে। তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণী হিসেবে যৌক্তিক সিদ্ধান্তই নেয়ার চেষ্টা করে যাব। সেই সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে। কিন্তু তাও অপ্রমাণিত সুপার স্ট্রিং থিওরিতে আমার আস্থা থাকবে পৃথিবীকে কোন কচ্ছপের পিঠে ভাসমান থালা বলে কল্পনা করার চেয়ে। কারণ অতি-তন্তু তত্ব দাড়িয়ে আছে কিছু সাহসী হাইপোথিসিসের উপর, সেই হাইপোথিসি থেকে এসেছে সৌন্দর্য মণ্ডিত এক গাণিতিক মডেল। কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরির কুৎসিত ইনফিনিটি প্লেগে আক্রান্ত তত্ব গুলোর চেয়ে এটি গাণিতিক ভাবে সুসংহত। যদি এটি ব্যর্থ হয় তবেও এটি মানুষকে দিয়ে যাবে মহাবিশ্বকে দেখার নতুন কিছু দৃষ্টিকোণ। এজন্যেই কোন বৈজ্ঞানিক তত্বই ব্যর্থ নয়, কারণ তার পথ ধরেই নতুন তুলনামুলকভাবে সম্পূর্নতর নতুন তত্ব।
অন্যদিকে কচ্ছপ-তত্ব মানুষকে নতুন কোন আলো দেখাবে না। বরং অজানা সম্পর্কে যৌক্তিক ধাপগুলোতে মানুষকে অনুৎসাহিত করে পেছনে ঠেলে দেবে।
মানব সভ্যতার ইতিহাস এক বিশাল আরোহ পদ্ধতি যা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে যুক্তি এবং মানবতা দিয়ে। এই এগিয়ে যাওয়ায় কোন শেষ কথা নেই। যারা দাবী করে শেষ কথা আছে তারা সত্য জানতে আগ্রহী নয়, অথবা সাহসী নয়।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে মানুষ যতটা অধিবিদ্যিক ধারনার পেছনে সময় নষ্ট করেছে তাও কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। এর পেছনে রয়েছে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ইন-সিকিউরিটি। প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুকে ভয় পাওয়া। মহাবিশ্বের মাঝে নিজের গুরুত্ব হীনতাকে অস্বীকার করা। কিছু একটা থেকে যাবে সেই আশা প্রথম মানুষের মাঝে ঢুকিয়েছিল পৌরাণিক পুরহিতরা। অনেকটাই পলিটিকাল কারণে। কিন্তু এই আশায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রতিনিয়ত, আর দলবদ্ধতার সিকিউরিটির প্রতি তাদের তীব্র আকাঙ্ক্ষাই তাদের অবচেতন ইন-সিকিউরিটিকে প্রমাণ করে। প্রতিমুহূর্তেই নিজেদের দলকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসানোর চেষ্টা, কিংবা কি হারে বিশ্বে তাদের নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধি তা প্রমাণের জন্য অসংখ্য পরিসংখ্যান উপস্থাপন সবকিছুই প্রমানকরে দাবী কৃত ঐশ্বরিক আধ্যাত্মিকতার অসাড়তাকে। এই তীব্র নিরাপত্তাহীনতাই জন্ম দেয় হিংসার, ক্রোধের। আমি দিকে দিকে তার চিহ্ন খুঁজে পাই।
ঐতিহাসিক ভাবে যার অস্তিত্বেই প্রশ্নবিদ্ধ সেই মোজেস এর প্রতিশ্রুত ভূমির কথা বলে পশ্চিম উপত্যকায় ,গাজায় চলে সেটেলমেন্ট, অকুপেশনের জাঁতাকলে নতুন হলোকাস্ট, কিংবা মার্কিন মুলুকে শ্বেত আধিপত্য বাদীদের মদদ দেয় যাজকরা, ইভানজেল(উচ্চারণ নিশ্চিত নই) ক্রিশ্চিয়ান এক যাজক ঘোষণা দেয় বারাক ওবামার রক্ত পবিত্র ভুমিকে আরও পবিত্র করবে , কিংবা আমার দেশের বাংলা ভাই, সৌদির বিন লাদেন!!

প্রান্তিক মানুষেরা ধর্মপালনে উৎসাহী হয় না। দারিদ্র্য টিকে থাকা এসবের সাথে লড়াই করতে করতে তাদের উপর স্বর্গ নরক একাকার হয়ে যায়। অন্যকে দুর থেকে দেখলে যেমন খুব ভিন্ন দুটি রং কেও আলাদা করা যায়। আর উচ্চবিত্তের মাঝেও রিচুয়াল পালনের হার কম, ধর্ম চিরকাল পালিত হয় মধ্যবিত্ত সমাজ দ্বারাই।
আমি লোভের সাগরে ডোবা মানুষ দেখতে পাই, অতি-লৌকিক পুরস্কারের আলোয় জ্বলজ্বলে চোখ দেখতে পাই। অসংখ্য স্তুতি দেখতে পাই । কোন এক স্বৈরাচারের প্রতি। তার পরাক্রমশালী ক্রোধ, বালকসুলভ আবেগ, গভীরতা-হীন চিন্তাশক্তি, আর অদ্ভুত "ন্যায়বিচার" দেখে তাকে আমার কমবয়সে সিংহাসনে ওঠা কোন মিশরীয় ফারাও মনে হয়। উচ্চারিত স্তুতি আর অর্থহীন রিচুয়ালের প্রতি তার তীব্র আগ্রহ দেখে তাকে আমার সম্ভ্রান্ত পরিবারের বখে যাওয়া একমাত্র সন্তান মনে হয়। প্রতিমুহূর্তে তার নিজস্ব সৃষ্টির কাছ থেকে নিজের নাম শুনতে চাওয়ার মত হাস্যকর হীনমন্যতার কারণে আমার মনে হয় তার শৈশব খুব ডিস্টার্বেন্সের মধ্য দিয়ে গেছে। তার মাঝে আমি অসংখ্য অস্তিত্বের সংকটে ভোগা মানুষের ছাপ দেখতে পাই। যুগে যুগে মানুষের সকল কষ্ট স্তূপ হয়ে জমে যেন তার অবয়ব তৈরি হয়েছে। মানুষের সামাজিক পরিমণ্ডলে সকল সমস্যার যে স্থূল সমাধান মানুষের মাঝে আসে সেই সমাধান গুলো এক্সিকিউট করতেই যে স্বত্বা দরকার তাকে তেমনই দেখতে পাই। ডুবে যাওয়া মানুষের শেষ চেষ্টার প্রধানতম উদাহরণ হিসেবে যুগে যুগে ধর্মবেত্তারা তাকে তৈরি করেছে।
ঈশ্বর কি এই মহাবিশ্বের অনুকূলে যতগুলো আকস্মিকতা দরকার ছিল তার সংকলন হতে পারে? তাহলে মহাবিশ্বের সাথে ঈশ্বরের ইন্টারেকশন খুবই সীমাবদ্ধ এবং নৈর্ব্যক্তিক।
অসংখ্য পবিত্র বই দেখতে পাই । অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়েও সেগুলো থেকে কোন মহিমান্বিত শব্দগুচ্ছ পেলাম না। ওল্ড টেস্টামেন্ট পড়ে মনে হল কোন প্রাচীন যুগের ত্যারেন্তিনোর মুভির স্ক্রিপ্ট। এত বর্বর মানুষের বর্ণনা পবিত্র ভাবা হতে পারে আমার ধারনা ছিলনা। সুসমাচারে দেখলাম অসংখ্য স্ববিরোধী এবং পরিবর্তিত ইশপের গল্পের সমাহার। দেখলাম কুরানে অদ্ভুত সব আদেশ। দেখলাম যাদুতে আক্রান্ত হচ্ছেন নবীজি আর তার প্রতিকার নাযিল হচ্ছে।
আমি ক্লাস ত্রি এর বিজ্ঞান বইতে হাজার বছরের পুরাতন এইসব বই এর থেকে উন্নত সত্যের কথা দেখেছি।
আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি না। আমি মানুষ। প্রতিটি ইকুয়েশন আমাকে আনন্দ দেয়, ইলেক্ট্রোডাইনামিক্সের যে সমীকরনটা সেদিন কম্পিউটারের সাহায্য ছাড়া সমাধান করে ফেললাম সেটা আমায় আনন্দ দেয়, সেদিন ফাইনম্যানের ক্যারেক্টারইসটিকস অফ ফিজিক্যাল ল বই টা খুঁজে পেয়ে শিশুর মত নেচেছিলাম, ভালোবাসার মানুষটির হাতে হাত রাখতে এখনও প্রথম দিনের মত আমার মন খুশিতে ভরে যায়, আমি আনন্দিত হই। আমার অনুভূতি , সুখ দু:খ সবকিছুই বাস্তব এবং জান্তব। আমার খুশি হতে কিংবা এ পৃথিবীতে আমার খুশি ছড়িয়ে দিতে ,কিংবা সমস্যা জর্জরিত পৃথিবীতে অন্তত একটি সমস্যার আংশিক সমাধানের ইচ্ছা, সবই তীব্র বাস্তব। কোন অলৌকিক ইশারায় নয়।যদি ভালোবাসা, হেসে উঠা , নতুন বইয়ের পাতার যৌবনের গন্ধ নেয়ার জন্যে আমার মৃত্যুর পর আমার মিশে যাওয়া কোষ থেকে কোন অতি-লৌকিক স্বত্বা ক্লোন তৈরি করে আমাকে আজন্ম অক্সিডেশনের জন্যে নরকে নিক্ষেপ করতে চান তাহলেও আমি দু:খ করব না, বরং তার অবিচারের জন্য প্রতিবাদ করব। আমাকে চিন্তা শক্তি দেয়ার পর সেটার স্বাধীন ব্যাভারে যদি আমি অপরাধী হই, তাহলেও মাথা নত করব না।
আমি গর্বিত আমি মানুষ। আমি আনন্দিত আমি পেয়েছি জ্ঞানের স্বাদ, ভালোবাসার সৌরভ, ঘাসের উপর পড়ে থাকা শিশিরে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন। আমি কোন আঙ্গুর রস বয়ে যাওয়া হুর পরী বেষ্টিত অজানা যায়গার আমাকে লোভ দেখায় না। আমি এই মাটিতেই সুখ পাই , কবিতা পড়ে সুখ পাই, কথা বলে সুখ পাই।



নিয়ন্ত্রণ, শব্দটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ । কারণ সবাই নিয়ন্ত্রণ করে অথবা নিয়ন্ত্রিত হয়। নিয়ন্ত্রণ হতে পারে জাগতিক অথবা ঐশ্বরিক অলৌকিকতা পূর্ণ। আমরা যেকোনো স্বাভাবিক সিস্টেমের মতই নিয়ন্ত্রণ চাই। নিজের দায়িত্ব কারো ঘাড়ে দিতে পারলে আশ্বস্ত হই। স্থূলবুদ্ধিরা পীর ফকির ধরে থাকে, পারলৌকিক দায়িত্ব নেবার জন্যে। এজন্যেই যুগে যুগে মানুষ এবসোলিউট অসম্ভব কথা শুনিয়েছে আমরা মেনে নিয়েছি। এখনও যুক্তরাষ্ট্রে আছে মোর্মেন ধর্মাবলম্বীরা, সায়ান্টোলজির অনুসারীরা। এই মহাবিশ্ব জটিল এবং বিভ্রান্তকারী। যখন ছোট অবস্থায় ভাবতাম এই আকাশের কোন শেষ নেই তখন শরীর কেপে উঠত। ভেবে পেতাম না কিভাবে অসীম কে চিন্তা করা যায়। তাই আমরা দুর্বল। আমাদের বৌদ্ধিক এবং দার্শনিক দায়িত্ব অনেক ভারী মনে হয় আমাদের কাছে। তাই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে আমরা সদাসর্বদা প্রস্তুত।
নিয়ন্ত্রণ মানব সমাজের প্রধান বিল্ডিং ব্লক। মানব সমাজ তৈরি হয় ব্যক্তি মানুষ কে অস্বীকার করার মধ্য দিয়েই। সামাজিক সম্পর্ক সেখানে ব্যক্তি মানুষের চেয়ে বেশী গুরুত্বের অধিকারী। একারণেই তৈরি হয় গাবদা সাইজের আইনের বই। যদিও এটা সাধারণ ধারনা যে সমাজ ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব, কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে ধারনাটি সমাজের প্রতি অতিপক্ষপাতে আক্রান্ত। যেখানে আমজনতা নানা নিয়ন্ত্রণের চক্করে পরে অন্ধকার দেখার পরেও ভেবে নেয় ননসেন্স নিয়মকানুন তার ভালোর জন্যেই তৈরি করা, সেখানে আমরা দেখতে পাই ব্যক্তি মানুষের করুন মৃত্যু। এই শতাব্দীতে সমাজের প্রথম কাজ মানুষ কে সার্ভ করা নয়, তার নিজের পেট ভরা। এবং তার সুফল ছোট্ট একটি দলকে প্রদান করা। কিছু মানুষ বুঝে যেতে পেরেছে মানুষের সমাজ কে যারপরনাই বিশ্বাস করে, তাই সমাজের নাম ধরেই নিয়ন্ত্রণের জাল বসানো সম্ভব। এই কতিপয় মানুষরাই যুগে যুগে দেখা দিয়েছে কখনো রাজনৈতিক নেতা, কখনো ধর্মবেত্তা রূপে।
মানব সমাজে ঈশ্বরের নামে নিয়ন্ত্রণ অনেক পুরনো ইতিহাস। সেই পুরাতন যুগের গ্রাম্য পুরোহিত থেকে যার শুরু। সকল আধুনিক ধর্মই যখন মূলধারায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তখন তীব্রভাবে রাজনৈতিক হয়ে গিয়েছে। আমরা দেখতে পাই কিভাবে গির্জাগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্লজ্জভাবে দখল করে নিত, কিংবা অধুনা হিজবুত তাহরীর কিংবা জামাত যা চায়। ইসলাম শুরু থেকেই পলিটিকাল ছিল। কাড়ন মূলধারায় এটি অনেক দ্রুত আসতে পেরেছে। অন্যদিকে ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম দীর্ঘদিন আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের আগে। এটা খুব ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় কিভাবে ঈশ্বর মানব রাজনীতির এত বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠেন। তিনি একের পর এক ওহী পাঠাতে থাকেন রাষ্ট্র পরিচালনার উপর। যদি ওহী না পাঠান তাহলে তার প্রতিনিধিত্বকারী যাজকেরা জিওর্দানো ব্রুনো পুড়িয়ে মেরে রাজনৈতিক ক্ষমতার ষোলকলা পূর্ণ করে। মধ্যযুগের ইনকিউজিশনের কথা মনে হয় মানব ইতিহাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবচেয়ে কুৎসিত প্রচেষ্টার একটি। হিটলার বাবাজী যেটি জাতীয়তাবাদের ধুয়ো ধরে ৪০০ বছর পর আবার করে দেখিয়েছে।
ধর্মের মানবিক হতে গিয়ে কিভাবে রাজনৈতিক হয়ে জিজিয়া কর উৎপাদনে উৎসাহী হয়ে পরে এটির বিশ্লেষণে গেলে সমাজের নিয়ন্তা হবার যে সুপ্ত বাসনা মানব মনে লুকিয়ে থাকে, অথবা অসংখ্য ব্যক্তিসত্তাকে হত্যা করে যে আমোদ লাভ করা যায়, সেদিকেই দৃষ্টি যায়। সকল ধর্মই শুরু হয় আধ্যাত্মিক মুখোশে। কিন্তু একজন চতুর রাজনীতিবিদের মত ধর্মের কাঠামোও নিয়ন্ত্রণ লোভী হয়ে উঠে। প্রকারান্তে ঈশ্বর হয়ে উঠেন "পাওয়ার হাঙ্গরী"। সর্বশক্তিমানের এরকম শক্তির লোভ কেন যেন বেমানান দেখায়।
কোন ধর্মের মাঝে সত্যিকার সাম্যের কথা থাকে না, বিভেদ বিভাজন, বর্ণবাদ প্রত্যেক ধর্মের সুন্দর অনুশাসনের নীচে লুকিয়ে থাকে। কারণ যে সমাজে মানুষের ব্যক্তিতার মূল্য আছে সে সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। এজন্যেই ধর্ম দেয় বিভাজনের রূপরেখা, নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার যে বিভাজন। ধর্ম মানুষে ধার্মিক এবং বিধর্মী এই দুইভাগে বিভক্ত করে দেয়। ঈশ্বর বিশ্বাসের পুরস্কার স্বরূপ ধার্মিকদের হাতে পরে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার। তারা নিয়ন্ত্রণ করবে বিধর্মীদের। কাড়ন তারা বিশ্বাস করে ভিন্ন কোন ঈশ্বরকে।
মানুষ ব্যক্তিসত্তা কে সামাজিক চাপে অস্বীকার করে অনেক সময়। কিন্তু সকল নিয়ন্ত্রণের প্রধান শত্রু এই ব্যক্তি মানুষটি। যারা সম্মান করে নিজস্ব চিন্তাকে তারা নিয়ন্ত্রকের চোখে অপরাধী। টুকরা টুকরা করা হয়েছিল মনসুর হাল্লাজকে। কোপানো হয়েছিল হুমায়ুন আজাদকে। সকল পত্রিকায় কমিউনিস্ট পার্টির জয়জয়কার ছাপানো হত লেলিনের রাশিয়ায়। বিরোধী দলের পার্থীদের নির্বাচনে প্রচারণা করতে দেয়া হত না বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্সটিটিউশন সম্ভবত ডানপন্থী লোকদের তৈরি। ধর্মের সাথে জাতীয়তাবাদ মিশিয়ে নতুন নতুন বিভাজনের খসড়া আর নিয়ন্ত্রণের নীলনকশা প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে।
নিয়ন্ত্রিত হতে চাই না আমি। সুন্দর তম হোক আর কুৎসিত-তম হোক, ছোট্ট পৃথিবীতে দু-চারটে কথা ভাবতে চাই, বলতে চাই। কারো উপকার না করতে পারি, কারো ক্ষতি না করে থাকতে চাই। নিজের ব্যক্তিগত স্বতঃটাকে একটু সম্মান করতে চাই। মাথা একটু কম নোয়াতে চাই।
বিজ্ঞান ঈশ্বর সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেয় নি, তাই ঈশ্বর আছেন কি নেই সেটা সম্পর্কে আমার কোন সিদ্ধান্ত নেই। তবে আমি ব্যক্তিসত্তা কে সম্মানের জন্যে অনন্ত নরকই যদি সেই স্বৈরাচারী স্কাইড্যাডি আমার জন্যে বরাদ্দ করেন তাহলে আমি বলব বোরিং ইট অন।

মানুষের প্রাচীনতম ধর্মীয় অনুভূতি গুলো প্রথমত উৎপন্ন হয়েছিল একধরনের ভীতি থেকে। প্রথম যে মানব সমাজে অলৌকিকতার ধারনা এসেছিল তা সম্ভবত প্রকৃতিকে বুঝতে অক্ষমতার কারণেই। প্রাচীন সমাজে ধর্মমত গুলো প্রধানত ছিল যাদু নির্ভর। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিকে না বুঝতে পেরে সেগুলোকেই উপাসনা শুরু করে প্রস্তর যুগের মানুষ। এ উপাসনা কিন্তু সম্পূর্ণ পার্থিব কারণেই হত। প্রাথমিক উপাসনা সম্ভবত ছিল ঝড় বন্যা বজ্রপাত হতে বাচার জন্যে। সেজন্যেই আমরা দেখতে পাই প্রতিটি প্রাকৃতিক শক্তিকে উপাসনা করার ব্যাপারটি। সমাজ যখন আরও জটিল এবং কাঠামো বদ্ধ হয়ে এলো তখন মানুষের মৌলিক চাহিদার বাইরেও অন্যান্য চাহিদা তৈরি হল। যার ফলে উপাসনার অনুষঙ্গও বাড়ল। শিকারে যাবার আগে শিকারের দেবতার উপাসনা বা মাছ ধরেতে যাবার আগে পানির দেবতার প্রতি উপাসনা সেগুলোই নির্দেশ করে।
প্রকৃতির কাছে উপাসনার সময়ই মানুষ আবিষ্কার করে প্রাচীনতম ধর্মীয় বোধ। পুরস্কার এবং তিরস্কার বা শাস্তি। কয়েকটি ধর্ম ছাড়া বাকি সব ধর্মই দাড়িয়ে আছে পুরস্কার এবং তিরস্কারের এই কাঠামোর উপর। তবে প্রাচীন সমাজে এই পুরস্কার বা তিরস্কারের ব্যাপারগুলো ছিল হাতে হাতে ফল পাবার মত। অর্থাৎ যখন পুরস্কার বা তিরস্কার হিসেবে চলতি জীবনের কোন অনুষঙ্গই উঠে আসত। হয়ত বাচ্চা হওয়ার জন্যে অথবা বেশী ফলনের জন্যে। খরায় ফসল জ্বলে গেলে সেটাকে ইন্টারপ্রেট করা হত দেবতাদের রোষ হিসেবে।
প্রাথমিক ধর্মগুলো তাই প্রকৃতিবাদী ছিল। এবং পুরস্কার বা তিরস্কারও সীমাবদ্ধ ছিল পৃথিবীর জীবনের মাঝেই। এই ব্যাপারগুলো পরিচালনার জন্যে শ্রমবিভাগ ঠিক কখন তৈরি হয়েছিল জানা যায় না। তবে পুরুহিততন্ত্র যে অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান এটা নিশ্চিত হওয়া যায়। পুরোহিতরা তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্যেই ধর্মবোধে নতুন রহস্যের আমদানি করে। তাদের হাতে ধর্মবোধের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় একই সাথে তারা হয়ে উঠে রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। আমরা দেখতে পাই কৃষিভিত্তিক সমাজে গ্রামগুলোতে গ্রাম্য-প্রধান দের সাথেই গুরুত্বের সাথে অবস্থান করতে পুরোহিত দের। প্রাচীন সমাজ গুলোতে গ্রাম্য প্রধান সাধারণত ন্যাচারাল লিডার বা অধিকতর সক্ষম মানুষেরাই হত। কিন্তু ক্ষমতার ভাগাভাগিতে যখন পুরোহিতরা ফ্যাক্টর হয়ে উঠল তখনই বোধহয় মানুষের মাঝে প্রথম "আনডিফাইন্ড" কোয়ালিটির মানুষরা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যাওয়া শুরু করেছিল। যে ঐতিহ্য আমরা এখনও বহন করে চলেছি।
সমাজের জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের চাহিদা এবং সে অনুসারে না পাওয়ার ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। মানুষ পূজার ফলে প্রতিশ্রুত পুরস্কার না পাওয়ার ক্ষোভ যখন পুরোহিতদের সিংহাসন টালমাটাল করে দিল তখনই সম্ভবত জন্ম নেয় মানব ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ধারনা। পুরোহিতরা বুঝতে পেরেছিল নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে মানুষকে তৃপ্ত রাখাও জরুরী। যখন পার্থিব চাহিদা পূরণে দেবতারা ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছিল তখন বাধ্য হয়েই পুরোহিত দের খুঁজতে হয় জনসাধারণকে তৃপ্ত করার নতুন উপায়। মৃত্যুর পরের জীবনের ধারনা জন্মায়। পুরস্কারের সংজ্ঞা তাই পার্থিব থেকে সরে গিয়ে পারলৌকিক হয়ে উঠে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে স্বর্গ নরকের আলাদা সংজ্ঞা তৈরি হয় নি বলেই মনে হয়। মৃত্যুর পরের জীবনটাকে পার্থিব জীবনের আদলেই ডিজাইন করে পুরোহিতরা। সেখানে পুরস্কার আর শাস্তির তালিকা তাই তৈরি হয় পার্থিব ইন্দ্রিয় সুখ এবং কষ্ট কে ঘিরেই। সেখানে আমরা দেখতে পাই ক্ষুধা, পান, নারী সঙ্গের বর্ণনা। আর শাস্তি হিসেবেও আগুন কেই বেছে নেয়া হয় যা চিরকাল মানুষের ভয়ের কারণ।
এই প্রকৃতিবাদী ধর্মবোধ থেকে একেশ্বরবাদীতায় উত্তরণ হয়েছে কোন দার্শনিক উৎকর্ষের জন্যে নয়। বরং আমরা দেখতে পাই গ্রীক মেধাবীরা বহু ঈশ্বরেই বিশ্বাস করতে। অন্যদিকে একেশ্বর বাদী হিব্রু সভ্যতার(যদিও মোজেস বা ডেভিড ,সলোমনের সময় হিব্রু ধর্ম পুরোপুরি একেশ্বর বাদী ছিল না। জিহোভা ছাড়াও আরও কিছু মাইনর দেবতার পূজা হত) কিন্তু সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানের অবদান শূন্যের কোঠায়। একেশ্বর বাদ প্রধানত বিবর্তিত হয়েছে রাজনৈতিক কারণেই। পুরোহিতরা সবসময়ই সম্রাটদের তোষামোদি করত, আবার সম্রাটরাও পুরোহিত দের রয়েসয়ে চলত। সম্রাটের শক্তির প্রমাণ হিসেবেই পুরোহিতরা ঘোষণা করত কোন দেবতার সুপিরিয়রটি। একযুগের দেবতা তাই অন্য যুগে অপাংক্তেয় হয়ে পড়ত। এভাবেই ক্রমাগত রাজনৈতিক শক্তির চালিকা হিসেবে পুরোহিত তন্ত্রই এক-দেবতার ধারনা নিয়ে আসে।
মানুষের মৌলিক নীতি-বোধের সাথে স্বর্গ নরক কতটা কম্প্যাটিবল তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। তবে নরকের ধারনা আমি কোনভাবেই নৈতিক বলতে পারি না। অনন্ত শাস্তির ধারনা অসুস্থ ধারনা। বারট্রান্ড রাসেল জেসাসের নৈতিক চরিত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কারণ তিনি নরকে বিশ্বাস করতেন। আর নৈতিক বিষয়গুলোর বিকাশ এভাবে ভয় বা লোভ থেকে আসুক সেটাকে গ্রহণযোগ্য ভাবা যায় না। লোভ জিনিসটাই একটা কালো অনুভূতি। তাই সুস্থ নৈতিকতা লোভের মাধ্যমে মোটিভেটেড হওয়া উচিত নয়। আর ভয়ও একটি নৈতিকভাবে দুর্বল মোটিভেশন। পুরস্কার বা শাস্তি নয়, মানুষের মনে প্রয়োজন মানবতার মোটিভেশন। আমার সামনে বিপদগ্রস্ত মানুষ থাকলে তাকে আমি সাহায্য করব, এটার মোটিভেশন চিরায়ত মানবতাই হওয়া উচিত।
মানুষের ইতিহাসে অসংখ্য বর্বর অধ্যায় আমরা পার করে এসেছি। রোমান কলিসিয়াম থেকে শুরু করে ক্রুসেড, উইচ হান্ট, ভিন্ন মতাবলম্বীদের পুড়িয়ে মারা, জোসেফ স্ট্যালিন, এডলফ হিটলার, হেনরী ট্রুম্যান, বেন্জামিন নেতানিয়াহু,জুলফিকার আলী ভুট্টো, গোলাম আজম, জর্জ ডব্লিউ বুশ, সাদ্দাম, বলে শেষ করা যাবে না এত অমানবিকতার ইতিহাস। মানব সমাজের ইতিহাসে আমরা ক্রমাগত উদাহরণ তৈরি করেছি নৃশংসতার, রক্তের আর মানবতার বিরোধী যুদ্ধের। কিন্তু তারপরও টিকে আছি আমরা। নতুন শিশুরা আসছে, তারা হাসছে কাঁদছে। এখনও পৃথিবীতে অবশিষ্ট আছে আনন্দাশ্রু। মানুষ টিকে থাকবে। তবে কোন প্রযুক্তি, মহান জ্ঞান, অসংখ্য ঈশ্বর, স্বর্গ নরকের হাইপোথিসিসের জন্যে নয়, মানুষ টিকে থাকবে মানুষের মনে থাকা নি:শর্ত মানবতার জন্যে। প্রতি যুগেই অন্তত কিছু মানুষ এই নি:শর্ত মানবতাকে রক্ষা করেছে, আগলে রেখেছে। এই যুগেও রাখবে। আর পৃথিবীতে টিকে থাকবে আনন্দাশ্রু।

ধর্মানুভুতির বয়ান

সকল সমাজেই ধর্মানুভুতির সংক্রান্ত সামাজিক ট্যাবু অথবা ক্ষেত্রে বিশেষে আইনি বন্দবস্ত থাকে। প্রায়ই আমরা দেখতে পাই কোন একজন মানুষকে মুরতাদ অথবা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হচ্ছে। কারও কারো মাথার দাম ঘোষণা করা হয়। যদিও মাথার দাম ঘোষণা করার প্রক্রিয়াটি আমার কাছে সেলফ হিপোক্র্যাসি মনে হয়। ধরা যাক সালমান রুশদীর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে(ইরান সত্যিই সালমান রুশদীর মাথার দাম ঘোষণা করেছিল, আরও নির্দিষ্ট করে  বলতে গেলে আয়াতুল্লাহ খোমেনী করেছিলেন। যতদূর জানি সেই ঘোষণা এখনো উহ্য করা হয় নি।)। এখন মাথার দাম ঘোষণা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে কেউ টাকার লোভে কাজটি করুক। অর্থাৎ কেউ যদি যার মাথা ঘোষণা করা হয়েছে তার উপর কোন ক্ষোভ না রেখেও মাথাটি কেটে নিয়ে আসে তাকেই পুরস্কৃত করা হবে। অর্থাৎ কেউ ধর্মবোধ থেকে উদ্বুদ্ধ হবার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার শত্রু কে নাশ করা তথা আত্নোপলব্ধির চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার কার্য সিদ্ধি। এই প্রক্রিয়াটি সত্যিকার অর্থে ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্র পুরো রূপটা উন্মোচিত করে দেয়। ঠিক বেঠিক আসলে আলোচনার চেয়ে নির্দিষ্ট অথোরিটির সিদ্ধান্ত মেনে চলার প্রক্রিয়া
আমার কৌতূহল আসলে জানা ধর্মানুভুতি জিনিসটা কি? কাকে আমরা ধর্মানুভুতি বলব? সঠিক ভাবে যদি ধর্মানুভুতির সংজ্ঞায়ন না করা যায় তাহলে সেটা মেনে চলার ব্যবহারিক অসুবিধা আছে। কয়েকবছর আগে প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিন আলপিনে একটা কৌতুক নিয়ে প্রচণ্ড হইচই হয়। আমি নিশ্চিত কার্টুনিস্ট স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে নি যে এই কার্টুনটিকে এভাবে ইন্টারপ্রেট করা হবে। আপাতত ব্লাসফেমী বা এ সংক্রান্ত প্রচলিত আইন , অথবা এ সংক্রান্ত সামাজিক ধারনা খুবই ধোয়াশাপুর্ণ। ঠিক কি কি বিষয়কে ধর্মানুভুতির এক্তিয়ারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে সেটা সুনির্দিষ্ট নয়।

সকল ধর্মই কিছু নির্দিষ্ট নীতির উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকে। সেই সকল নীতি কে সাধারণত স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে মেনে নেয়া হয়। তাদের কোনটির সমালোচনা করা হলে সাধারণত বিক্ষোভের সুর শোনা যায়। সমস্যা হচ্ছে সকল ধর্মই একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক। মুসলিমরা বলে এক আল্লাহ, হিন্দুরা বলে অনেক আল্লাহ, খ্রীস্টানরা বলে জেসাস ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন ইত্যাদি। অনেক মাইনর ধর্ম আছে যেগুলোর না না রকম বিশ্বাস আছে। এমন ধর্মও আছে যারা সূর্য কে দেবতা মনে করে। আফ্রিকান মাসাই উপজাতিতে সিংহ কে অনেক পবিত্র মনে করা হয়। হিন্দু ধর্মতে গরুকে। এখন পৃথিবীতে ধর্মের সংখ্যা অসংখ্য। সকলের নীতি এবং পবিত্র জিনিসের তালিকা করা হলে সেই তালিকার আকৃতি যথেষ্ট ভীতিকর হবে। ধরা যাক সেই তালিকা সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হবে। জাতিসংঘের ইউনেস্কো এই তালিকা সংকলনের দায়িত্ব নেবে। তারপর বিভিন্ন সরকারী অফিস, স্কুলে এই তালিকা সরবরাহ করা হবে। যারা ধর্মের প্রতি আক্রমণে দুঃখ পান তাদের আর দুঃখ পেতে হবে না। সকল ধর্মের পবিত্র ব্যাপার গুলো তালিকাবদ্ধ হলে সেই তালিকার কোন বিষয়ের ব্যাপারে কেউ আক্রমণাত্মক হওয়া যাবে না। যৌক্তিক হলেও আলোচনা করা যাবে না। কোন পবিত্র বিষয় হলে তার সম্পর্কে ঋণাত্মক কথা বলা যাবে না। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক একটি ধর্মের পবিত্র বিষয়ের তালিকায় আছে গবাদি পশুর বিষ্ঠা। এখন কেউ বলতে পারবে না গবাদি পশুর বিষ্ঠা নোংরা। কারণ এটির মাধ্যমে একটি পবিত্র বিষয়কে আক্রমণ করা হয়েছে। এখন কেউ কেউ বলবেন গবাদি পশুর বিষ্ঠাকে পবিত্র ভাবলে সেটা অযৌক্তিক। তখন তাকে বলা হবে তার বিশ্বাসের অনেক বিষয় ও অযৌক্তিক । যুক্তির বিচারে পবিত্রতার তালিকা করা যায় না। পবিত্রতার তালিকা হচ্ছে বিশ্বাস-ভিত্তিকএই প্রক্রিয়া সকলকে খুশি করবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। কারণ এইরকম তালিকা তৈরি হলে অচিরেই দেখা যাবে কথা বলার কোন বিষয় পাওয়া যাবে না। আপনি ডানে বামে যেদিকেই যাবেন পবিত্র কোন না কোন জিনিসের সাথে ধাক্কা খাবেন এবং আইন অনুযায়ী আপনি শাস্তির যোগ্য হবেন।



অবশ্য আসল জটিলতা তৈরি হবে অন্য-খানেকারণ অনেক ক্ষেত্রেই একটি ধর্মের পবিত্র কিছু অন্য ধর্মের অপবিত্র কিছুর সাথে মিলে যেতে পারে। তখন কি হবে? কারণ যার কাছে অপবিত্র তার ধর্ম পালনের অধিকার আছে। আবার যার কাছে পবিত্র তার ব্লাসফেমী আইনের অধীনে ধর্মকে আক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর অধিকার আছে। সুতরাং ব্যবস্থাটা পরিণত হবে প্যারাডক্সে। আমি নিশ্চিত এমন কোন ব্লাসফেমী আইন তৈরি করা সম্ভব না যার মাধ্যমে সকল ধর্মানুভুতির সুরক্ষা সম্ভব। এর একটি সমাধান হচ্ছে সকল ধর্ম বাদ দিয়ে কিছু ধর্ম বেছে নেয়া যারা ঐ জিওগ্রাফিক লোকেশনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। এটারও সমস্যা আছে। উদাহরণ স্বরূপ বাংলাদেশের জন্যে ইসলাম/খ্রিস্টান/হিন্দু/বৌদ্ধ ধর্ম বেছে নেই। এখানে সমস্যা হচ্ছে এই প্রধান ধর্ম গুলিও সাংঘর্ষিকইসলাম ধর্মে মূর্তি পূজার কোন স্থান এবং এটি একটা প্রধানতম ধর্মীয় অপরাধ। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মে পৌত্তলিকতা রয়েছে ইত্যাদি। এখন যখন একজন হিন্দু মূর্তিপূজা করে তখন এটি ইসলামের দৃষ্টিতে খারাপ কাজ করে। এটি মেনে নেয়া হয় যে সকলের ধর্ম পালনের অধিকার আছে এই ভিত্তিতে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ধর্মীয় সম্প্রদায় গুলি সত্যিকার অর্থে ব্লাসফেমী আইন মানে না। তারা ততক্ষণ চুপ থাকে যতক্ষণ তাদের মতে খারাপ কাজ গুলি করছে অন্য কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়। অর্থাৎ যদি আমি কোন ধর্মীয় সম্প্রদায় এর অন্তর্ভুক্ত হই আমার কোন সমস্যা হবে না। কেউ কিছু বলবে না। সমস্যাটা সত্যিকার অর্থে হয় যদি প্রতিপক্ষ কোন ধর্মের সদস্য না হয়। অর্থাৎ ব্লাসফেমী আইন আসলে নির্দেশ করে যে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত না হলে তাকে নির্দিষ্ট কিছু অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে। সেই অধিকারগুলো হচ্ছে ধর্মকে সমালোচনার অধিকার। ধর্মকে সমালোচনার অধিকার কাউকে না দেয়াটা তাই একধরনের বৈষম্য। আধুনিক রাষ্ট্র কখনই সফল হতে পারবে না যদি এর ভিত্তিতে বৈষম্যমুলক ধারনা থাকে। আধুনিক সমাজও তার বিকাশের দিকে মুখ থুবরে পরবে যদি এরকম বৈষম্যমুলক নর্মের উপর নির্ভর করে থাকে।

ধর্মানুভুতির ধারনা একটি মধ্যযুগীয় বৈষম্যমুলক ধারনা। এটি উৎসাহিত করে নাগরিকের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণের জন্যে যখন এর কোন দরকার নেই। কোন ধর্মের সমালোচনা কখনো কোন ধার্মিকের ধর্ম পালনে বাধা দেয় না। তাই সুতরাং বলতে দেবার অধিকার সত্যিকার অর্থে কারও অধিকার হরণ করে না। বলতে দেবার অধিকার কারো কোন ফিজিক্যাল ক্ষতিও করে না। দেশাত্মবোধ এবং ধর্মানুভুতির সুস্পষ্ট পার্থক্য হচ্ছে দেশাত্মবোধ বৈষম্যমুলক নয়, আর জাতির উৎকর্ষের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। সেখানে ধর্মানুভুতির কোন ইহ-জাগতিক লাভ নেই, এটি শুধুমাত্র চিন্তা এবং তা প্রকাশের বাধার মাধ্যমে শৃঙ্খলের বাধা সমাজ উপহার দিতে পারে।



অন্তর্জলে প্রায়ই ধর্ম বিদ্বেষী বলে একটা ট্যাগ দেখা যায়। ধর্ম বিদ্বেষ ঠিক কি জিনিস আমি জানি না। আমার মনে হয় যারা তাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর কথা প্রবল ভাবে প্রকাশ করে তাদেরই বিদ্বেষী বলা হয়। যেমন আমি ধর্মে বিশ্বাসী নই। এবং সেই সাথে মনে করি সকল ধর্ম অসত্য ও ক্ষতিকর। কিন্তু আমার প্রকাশ ভঙ্গি যেহেতু সামাজিক সুশীলতার মোড়কে মোড়া সেহেতু আমি হয়ত কল্লায় কোপ নাও খেতে পারি। কিন্তু যাদের সোশাল স্কিলের ঘাটতি আছে আর যারা আমার চেয়ে কম ভণ্ডামি করতে পারে তারা রেহাই পাবে না। আদতে আমরা পুরস্কার দিচ্ছি সোশাল গড্ডালিকাকে। যে যত ভণ্ড সে তত ভাল এই ভিত্তিতে।

আজ থেকে ভাবছি একটি নিজস্ব ধর্ম তৈরি করব। এই ধর্মের প্রধান কথা হচ্ছে কথা বলার স্বাধীনতা পবিত্র বিষয়। সুতরাং যেই আমার কথা বলার অধিকারের মাঝে সেন্সর বসাতে চান তারা আসলে আমার ধর্মের পবিত্র বিষয়টিকে আক্রমণ করছেন। সুতরাং ধর্মানুভুতির হিসেবে আমি কথা বলার অধিকার ব্লাসফেমী আইনের অধীনেই পাব।